Dhaka , শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
এদেশের মানুষের হৃদয়ে শেখ হাসিনার নাম থাকবে না: এ্যানি চৌধুরী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ১৭ বছর পর লক্ষ্মীপুরে প্রকাশ্যে শিবিরের র‍্যালি  শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিএনপির পক্ষেই সম্ভব..এ্যানি কমলনগর ইউএনও’র বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন, লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা :৪ সাংবাদিক আহত লক্ষ্মীপুর জামীরতলী দারুসুন্নাহ ইসলামিায়া আলিম মাদ্রাসার পুস্কার বিতরণ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার,সভাপতি আলী, সম্পাদক ফারুক লক্ষ্মীপুরে ব্যতিক্রমী আয়োজনে সুন্নাতে খাতনা গাজী কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরিফ, সম্পাদক শিপন। কমলনগরে ইউনিয়ন কৃষক দলের কৃষক সমাবেশ

শহরের দরিদ্রদের অর্ধেকই নতুন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
  • ১১০ Time View

করোনা অতিমারির সময় দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়ায়। গত বছর পর্যন্ত শহরে মোট দরিদ্রের ৫০ শতাংশই ছিল ‘নতুন দরিদ্র’। পরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টায় এ দারিদ্র্যের হার ধীরে ধীরে কমে প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

তবে নতুন দরিদ্রদের অনেকে এখনও নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার ঘটনা নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেই বেশি হয়েছে। এ বিষয়গুলো তলিয়ে দেখতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রবন্ধে এসব কথা উঠে এসেছে। ‘কভিডকালে নগর দারিদ্র্যের গতি : সহনশীলতার ব্যবচ্ছেদ’ শিরোনামের এক গবেষণা প্রবন্ধে এ-সংক্রান্ত আরও তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

 বিআইডিএসের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক-২০২৩’ সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনে গতকাল বুধবার দারিদ্র্য বিষয়ক প্রবন্ধটি উপস্থাপনা করা হয়। দু’দিনের এ সম্মেলন রাজধানীর লেকশোর হোটেলে শুরু হয়েছে। সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার।

বিনায়ক সেন বলেন, করোনার পর দারিদ্র্য কমে আসার পেছনে বড় অবদান রেখেছে আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবার ব্যবহার দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। আবার ওই সময়টায় যাঁদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তাঁরা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এ গবেষণা করেছে।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।

মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রসঙ্গে প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এই সেবা ব্যবহার করত। করোনার পর ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে।

বিনায়ক সেন বলেন, গ্রাম ও শহরের ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে। কারণ গ্রামের মানুষও শহরের মতো অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সংবিধানেও এই দুইয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। শহরে আয় বাড়ার সঙ্গে বৈষম্য বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরের দরিদ্র্য ৪০ শতাংশের বেশি হলো মেগা সিটিগুলো প্রবৃদ্ধির সুবিধা পায় না। এখানে বিশেষভাবে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আকাশের তারা গোনা কমিটি কিংবা সমুদ্র পাড়ের বালুকণা কমিটির মতো উন্নয়ন ধারণা বাদ দিতে চায় সরকার। এর পরিবর্তে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে সম্পদ সৃষ্টি করতে চান তাঁরা। এ জন্য নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। অনেক কাজ ধীরে ধীরে অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। গত ১০-১২ বছর ধরেই এ উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বৈষম্য দূর করার উপায় আছে। এক সময় রাজনৈতিকভাবে এসব উপায়ের উপকরণগুলো তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার এগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সামাজিক সুরক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। দারিদ্র্য মানবসৃষ্ট অন্যায়। এটি অবধারিত বিষয় নয়। সরকার দারিদ্র্য নিরসন চায়। সব ক্ষেত্রে সব নাগরিককে সমান সুযোগ দিয়ে দূর করতে চায় বৈষম্য।

বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাকের এবারের প্রতিপাদ্য উন্নয়ন সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ। গতকাল প্রথম দিন পাঁচটি কর্ম-অধিবেশনে মোট ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। শেষ দিনে আজ বৃহস্পতিবার আরও ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। দেশের ও বিদেশের গবেষকরা এসব প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং প্যানেল আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। শিক্ষাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।

Tag :
About Author Information

এদেশের মানুষের হৃদয়ে শেখ হাসিনার নাম থাকবে না: এ্যানি চৌধুরী

শহরের দরিদ্রদের অর্ধেকই নতুন

Update Time : ০১:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩

করোনা অতিমারির সময় দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়ায়। গত বছর পর্যন্ত শহরে মোট দরিদ্রের ৫০ শতাংশই ছিল ‘নতুন দরিদ্র’। পরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টায় এ দারিদ্র্যের হার ধীরে ধীরে কমে প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

তবে নতুন দরিদ্রদের অনেকে এখনও নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার ঘটনা নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেই বেশি হয়েছে। এ বিষয়গুলো তলিয়ে দেখতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রবন্ধে এসব কথা উঠে এসেছে। ‘কভিডকালে নগর দারিদ্র্যের গতি : সহনশীলতার ব্যবচ্ছেদ’ শিরোনামের এক গবেষণা প্রবন্ধে এ-সংক্রান্ত আরও তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

 বিআইডিএসের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক-২০২৩’ সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনে গতকাল বুধবার দারিদ্র্য বিষয়ক প্রবন্ধটি উপস্থাপনা করা হয়। দু’দিনের এ সম্মেলন রাজধানীর লেকশোর হোটেলে শুরু হয়েছে। সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার।

বিনায়ক সেন বলেন, করোনার পর দারিদ্র্য কমে আসার পেছনে বড় অবদান রেখেছে আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবার ব্যবহার দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। আবার ওই সময়টায় যাঁদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তাঁরা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এ গবেষণা করেছে।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।

মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রসঙ্গে প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এই সেবা ব্যবহার করত। করোনার পর ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে।

বিনায়ক সেন বলেন, গ্রাম ও শহরের ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে। কারণ গ্রামের মানুষও শহরের মতো অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সংবিধানেও এই দুইয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। শহরে আয় বাড়ার সঙ্গে বৈষম্য বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরের দরিদ্র্য ৪০ শতাংশের বেশি হলো মেগা সিটিগুলো প্রবৃদ্ধির সুবিধা পায় না। এখানে বিশেষভাবে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আকাশের তারা গোনা কমিটি কিংবা সমুদ্র পাড়ের বালুকণা কমিটির মতো উন্নয়ন ধারণা বাদ দিতে চায় সরকার। এর পরিবর্তে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে সম্পদ সৃষ্টি করতে চান তাঁরা। এ জন্য নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। অনেক কাজ ধীরে ধীরে অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। গত ১০-১২ বছর ধরেই এ উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বৈষম্য দূর করার উপায় আছে। এক সময় রাজনৈতিকভাবে এসব উপায়ের উপকরণগুলো তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার এগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সামাজিক সুরক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। দারিদ্র্য মানবসৃষ্ট অন্যায়। এটি অবধারিত বিষয় নয়। সরকার দারিদ্র্য নিরসন চায়। সব ক্ষেত্রে সব নাগরিককে সমান সুযোগ দিয়ে দূর করতে চায় বৈষম্য।

বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাকের এবারের প্রতিপাদ্য উন্নয়ন সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ। গতকাল প্রথম দিন পাঁচটি কর্ম-অধিবেশনে মোট ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। শেষ দিনে আজ বৃহস্পতিবার আরও ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। দেশের ও বিদেশের গবেষকরা এসব প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং প্যানেল আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। শিক্ষাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।