আইএমএফের শর্ত মেনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়ন থেকে কমিয়ে এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। তবে রপ্তানিকারকরা যেন কাঁচামাল কেনার অর্থ সংকটে না পড়েন, সে জন্য স্থানীয় মুদ্রায় গঠিত কম সুদের ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে বিতরণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ তহবিল থেকে সাড়ে ৪ মাসে ৩৬শ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ইডিএফের বিকল্প হিসেবে গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক তহবিল থেকে বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ঋণ ছাড় হচ্ছে। ঋণ ছাড় দ্রুত করতে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপের কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি শেষ হলে ঋণ ছাড় দ্রুত করতে ব্যাংকগুলোকে তাগাদাপত্র দেওয়া হবে।
আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হতে পারে আগামী নভেম্বর মাসে। এর আগেই কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হলো– দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করতে হবে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী। সে আলোকে আগামী জুনে নিট রিজার্ভ হতে হবে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ হিসাবের ক্ষেত্রে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ দেখানো যাবে না। আবার আগামী এক বছরে যেসব দেনা পরিশোধ করতে হবে, তাও বাদ দিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিট রিজার্ভ বাড়াতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমানোর পাশাপাশি ইডিএফের আকার কমানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টাকায় গঠিত তহবিল আকর্ষণীয় করতে ইডিএফের তুলনায় কম সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যাংক সময়মতো ইডিএফের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে দণ্ড সুদের বিধান করা হয়েছে। ইডিএফ থেকে একক গ্রাহকের ঋণসীমা ৫০ লাখ ডলার করে কমিয়ে সর্বোচ্চ ২ কোটি ডলার করা হয়েছে। এসবের পরও এখনও টাকা তহবিলের চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিতেই বেশি আগ্রহ রপ্তানিকারকদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল কিনতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। তাঁরা যেহেতু ডলার আয় করেই অর্থ পরিশোধ করেন, সেহেতু বিনিময় হার জনিত লোকসানের ঝুঁকি থাকে না। তবে টাকায় ঋণ নিয়ে ডলারে রূপান্তর করতে গেলে বিনিময় হার জনিত একটি লোকসান হয়। যে কারণে নানা শর্তের পরও ইডিএফ থেকে ঋণ নিতেই বেশি আগ্রহ তাঁদের।