দেশের তরুণদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য সরকার তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সরকার দেশের তরুণদের ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও ভবিষ্যৎ কাজের জন্য তৈরি করতে শুরু করেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে শুধু অনুসরণ করবে না, বরং প্রকৃতপক্ষে এর নেতৃত্ব দেবে। আমরা সারাদেশে যে উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করে আসছি, সেখানেও তাদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ দেখেছি।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সরঞ্জামগুলোকে যেন আমাদের মানবতাকে আঘাত বা ক্ষুণ্ণ করে এমন কাজে নিয়োজিত করা না হয়।’
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের সমাজের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করবে না। এই উদ্দেশ্যে আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্যই ডব্লিউইএফ—এর সাথে অংশীদারিত্বে একটি স্বাধীন ৪র্থ শিল্প বিপ্লব কেন্দ্রকে স্বাগত জানাবে।
সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যথাযথ আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ন্যানোটেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক জাতীয় কর্ম-কৌশল তৈরি করেছি। এ লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট স্থাপন করছে। স্মার্ট গভর্নেন্সের জন্য ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতাদের বিকাশের জন্য আমরা স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমিও চালু করেছি।
বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট তৈরির বিষয়ে জাতিসংঘের কাজে আগ্রহী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, এই গ্লোবাল কমপ্যাক্টে ডিজিটাল ও সীমান্ত প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।’
এসময় তিনি সাইবার আক্রমণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে সাইবার-আক্রমণ, বিভ্রান্তমূলক তথ্য ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি ব্লেন্ডেড শিক্ষার অপার সম্ভাবনার বিষয়ে সরকারের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মহামারীর সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল কাঠামোর সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করেছি। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনলাইনে চালু করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ কমবেশি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গিয়েছে। সরকার সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দৈনিক লেকচার সেশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে সংসদ টিভি চ্যানেলকে একটি শিক্ষা চ্যানেলে পরিণত করেছে। এটি নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ার ক্ষতি আংশিকভাবে পুষিয়ে দিতে পারে। সরকার সব পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে আপলোড করে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এটি শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং মডেল ক্লাস লেকচার আপলোড করার জন্য ‘মুক্তপথ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষার পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অভিযোজন করার ব্যবস্থা করেছি। সরকার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যথাযথ পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষক ও প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছে। আমি আশা করি যে, এই উদ্যোগগুলো অনেকাংশে শিখন ক্ষতি কমাতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীলতার ওপর জোর দিতে সরকার এখন দেশের স্কুল পাঠ্যক্রমকে নতুন করে সাজিয়েছে। আমরা তাদের মুখস্থ বিদ্যা রপ্ত করার পরিবর্তে নিজেরাই যেন চিন্তা করতে এবং কাজ করতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহিত করছি। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামাজিক এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা দিয়ে গড়ে তোলার আশা করি, যাতে তাদেরকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রি-স্কুলিংয়ের পাশাপাশি স্নাতকোত্তর গবেষণা ও উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিটে বাংলাদেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার মানসম্পন্ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রূপান্তরমূলক শিক্ষা অর্জনের জন্য সেই দূরদর্শী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।’
সূত্র: বাসস