নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা জসিম হত্যায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড
২০১৩ সালে লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান জসিমকে গুলি করে হত্যার দায়ে আটজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
সোমবার (২৯ মে) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আমিনা ফারহিন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মোবারক উল্যা (৬৬), আলী হোসেন বাচ্চু (৫০), হিজবুর রহমান স্বপন (৪৫), কবির হোসেন রিপন (৩০), একই বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. খোকন (৫০), মো. মোস্তফা (৭০), আবুল হোসেন (৫০) ও করইতোলা গ্রামের বাগবাড়ির জাফর আহম্মদ (৫৫)।
রায়ের সময় আদালতে আসামিদের মধ্যে সাতজন উপস্থিত ছিলেন। পলাতক এক আসামি হলেন— হিজবুর রহমান স্বপন।
কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন বলেন, এ মামলায় মোট ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। তাদের মধ্যে চারজন বিচার চলাকালে মারা যান। বাকি আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মামলার বাদী মফিজ উল্যা বলেন, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতদের ফাঁসির রায় হয়েছে। রায়ে আমি সন্তুষ্ট।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জের ধরে মোবারকরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য মফিজ উল্যাকে হুমকি দিচ্ছিল প্রতিপক্ষ। তা না করলে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।
এদিকে, প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহেদী হাসান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা চরম ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে জসিম সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে ছুটিতে বাড়িতে ফিরলে মোবারকরা তাদের হুমকি দেন। এরপর জসিম বাড়িতে না থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যান।
২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় গভীর রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে জসিমের বুকে গুলি করেন। এতে বাধা দিতে গিলে তারা অন্যদেরও মারধর করেন এবং গুলি করার হুমকি পালিয়ে যান। পরে জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার সে সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নাছের ১২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে আবার মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। লক্ষ্মীপুর জেলা সিআইডি পুলিশের সেই সময়ের এসআই আফসার আহমেদ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবার আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেন। এতে ওই ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সোমবার (২৯ মে) এ রায় দেন আদালত