বিএম সাগর লক্ষ্মীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মোশারফ হোসেনকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে দল থেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী ফরিদুন্নাহার লাইলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে জোটের শরিক দলের বৈঠকে লাইলীকে পরিবর্তন করে মোশারফের নাম ঘোষণা করা হয়।
তবে লাইলীকে পরিবর্তন করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, দল যাকেই নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠাবো তাকে জেতাতেই কাজ করবো। কে কাকে চেনে না তা জানার প্রয়োজন নেই। নৌকাই হবে প্রার্থীর প্রধান পরিচয়।
তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ৩ জন সিনিয়র নেতা জানান, আসনটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ (আবদুল্লাহ আল মামুন) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তার পক্ষে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা সক্রিয়ভাবে ভোট চাচ্ছেন। রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ উন্মুক্তভাবেই আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করছেন। এতে মহাজোটের প্রার্থী নৌকা নিয়ে আসলেও ভোটে জেতা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ নভেম্বর দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে নৌকার মাঝি হিসেবে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী মনোনীত হন। এরপর মাঝ পথে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে নানা রকম আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়। শেষমেশ আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত ‘জাসদ’ থেকে মোশারফকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোশারফ হোসেন ৬০ এর দশকে অবিভক্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে রামগতি-হাতিয়া-ভোলাসহ দ্বীপাঞ্চলে মুজিব বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার ছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে এ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন ও রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ জানান, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল থেকে যাকেই নৌকা দেওয়া হবে তাকে জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এখন জোট থেকে সাবেক এমপি মোশারফ হোসেনকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তাকে জেতাতে দলের সকল নেতাকর্মীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন তারা।
তবে ভিন্ন সুর রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদের। তিনি আসনটিতে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহকে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহর জন্য কাজ করছি। আবদুল্লাহ যোগ্য প্রার্থী। আমাদের সমর্থনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। জোটের প্রার্থীর বা নৌকার পক্ষে যাব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত ১৮ ডিসেম্বরের পরে জানাবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী মোশারফ হোসেন বলেন, আমি এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য। তখন জনগণের জন্য কাজ করেছি। নিজের স্বার্থে কিছুই করিনি। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। এখন জোট আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি জয়ী হয়ে রামগতি-কমলনগরের মেঘনার ভাঙন রোধসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে করতে চাই।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেত্রী ফরিদুন্নাহার লাইলীর মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জোটের প্রার্থী ছিলেন বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। তিনি গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয়ী হন। বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ খেলাপির অভিযোগে এবার মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আপিলেও তার প্রার্থিতা বাতিল হয়