নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পথযাত্রা যোগ দিতে এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারানো সজীবের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কয়েকদিন পর সজীবের বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল।তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হলো। বিএনপির অভিযোগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নিহত যুবক কোনো কর্মসূচিতে আসেননি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে দলীয় কর্মী বলা হয়েছে। আবার ঘটনার পর নিহত সজীবের পকেটে কৃষকদলের ব্যাজ এবং ক্যাপ পাওয়া গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, সজীব বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নিতে জেলা শহরে এসেছিলেন। সজীবের বাড়ি জেলার সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের কফিল মেম্বারবাড়িতে। নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সজীবকে হারিয়ে তার মা নাজমা বেগম ও বোন কাজল আক্তার আহাজারি করছেন। কিছুতেই থামছে না তাদের কান্নার রোল। বাড়ির উঠানে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন বাবা আবু তাহের। তার মৃত্যুতে প্রতিবেশী এবং স্বজনদের মধ্যেও শোক নেমে এসেছে। সজীব ছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে। সজীবের মা-বাবাকে সান্তনা দিতে ছুটে এসেছেন চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাফায়ত হোসেন স্বপন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন। সজীবের মা কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলেন, সজীব তুই কই? বাবারে তুই বুঝি আমার জন্য আর ওষুধ কিনে আনবি না, মা তোকে বুকে ধরে রাখতে চায়। তুই তো আমার সবচেয়ে আদরের। সজীবের বাবা আবু তাহের বলেন, সজীব পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। সে তার মেজো ভাই সুজনের সঙ্গে কাজ করত। আমার তিন ছেলে। বড় ছেলে মিজান সৌদি আরব প্রবাসী। কয়েকদিন পর সজীবেরও সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। এখন লাশ হয়ে পড়ে আছে। তিনি বলেন, গতকাল (১৮ জুলাই) যখন সজীব বিএনপির পদযাত্রায় যায়, আমাকে বলছে, বাবা আমি একটু লক্ষ্মীপুর থেকে আসি। সজীব তার বাড়ি এলো না। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাফায়ত হোসেন স্বপন বলেন, সজীব আমাদের দলের একজন সক্রিয় কর্মী। তার বাড়ি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নে হলেও তিনি সব সময় চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যেতেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এ হত্যার ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। তিনি বলেন, সজীব সংঘর্ষে মারা যাননি। বিএনপি নেতাকর্মীরা যে স্থানে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে, সজীবের মৃত্যুর স্থল ওই স্থান থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে। তার মৃত্যুর পর ৯৯৯ এ একটি কল আসে। পুলিশ বিএনপির নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যস্ত ছিল। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এসপি বলেন, চিকিৎসকের দেওয়া তথ্য মতে, তার বাম হাতে দুটি কোপের দাগ ছিল। রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। ব্যক্তিগত কাজে সজীব শহরে এসে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মারা যান। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে শহরের সামাদ মোড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় কৃষকদল কর্মী সজীবকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনি এসময় দৌড়ে কলেজ সড়কের মদিনউল্যা হাউজিংয়ের পাশের ফিরোজা টাওয়ার নামে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। অন্য দিকে রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে ঝুমুর সিনেমা হল, মটকা মসজিদ এলাকায় পুলিশ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হন। বিএনপির দাবি, তাদের অনেকের গায়ে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লাগে।