স্টাফ রিপোর্টার:পীরের নির্দেশে জীবিত থেকেই নিজের কবর পাকা করলেন বৃদ্ধ হানিফ
জীবিত অবস্থায়ই নিজের কবর ইট দিয়ে পাকা করে নির্মাণ করলেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মো. হানিফ নামের ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ। তিনি চান মৃত্যুর পরে তাকে এখানেই দাফন করা হোক। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
হানিফ স্থানীয় ভাবে জমিদার ডাক্তার নামে পরিচিত। তিনি বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জোড়খালী গ্রামের মৃত মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে। ব্যক্তি জীবনে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের সন্তানের জনক তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মধ্যে বিশাল পাকা ঘর। ঘরের ডান পাশে খনন করে মাটির তলদেশ থেকে ইটের গাঁথনি দিয়ে কবরের আকৃতি করে তৈরি করা হচ্ছে। রাজ মিস্ত্রিরা একনিষ্ঠ মনে কবর নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। পাশে চেয়ারে বসে নিজের কবরের কাজ দেখভাল করছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ হানিফ। রোগাক্রান্ত ও শারীরিক জরাগ্রস্ত হওয়ায় মৃত্যু চিন্তা ভর করে তাকে।
জানা যায়, মো. হানিফ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ দরবার শরীফের মাও. খাইরুল বাশার ফারুকীর একজন খলিফা। মাইজভান্ডার দরবার শরীফে তিনি ৫৫ বছরেরও অধিক সময় এ তরীকার সাথে জড়িত। পীরের নির্দেশে প্রতি বছর আরবি রবিউস সানি চন্দ্র মাসের ১১ তারিখে পারিবারিক ভাবে নিজ বাড়িতে ওরস মাহফিল করে আসছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তার রয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার মুরিদ। বর্তমানে তার বয়স আশি বছর। পীরের নির্দেশে তিনি এমন কাজ করছেন। তবে এলাকাবাসীদের বক্তব্য, মৃত্যুর পর নিজের কবরকে মাজার শরিফ বানানোর লক্ষ্যে পাকা করেছেন হানিফ।
নিজের কবর নিজেই তৈরি করার বিষয়ে মো. হানিফ বলেন, এই জায়গায় হয়তো আমার ছেলেরা কবর নাও দিতে পারে। তাই আমার ক্রয়কৃত নিজস্ব জায়গায় আমি আমার কবর তৈরি করছি। আমি এখানে থাকব। মৃত্যুর পরে এ কবরকে কেন্দ্র করে আমার ভক্তরা মাজার তৈরি করে তা জেয়ারত করবে।
এখানে ঘরের পাশে কবর স্থাপন ও পাকাকরণ বিষয়ে পরিবারের কোনো সদস্যের দ্বিমত প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আমি পীরের নির্দেশনা পেয়ে নিজের কবর নিজে তৈরি করছি তাই কারো কোনো আপত্তি নাই।
হানিফের বড় ছেলে শাহাবুদ্দিন বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন মাইজভান্ডার তরিকায় হাজার হাজার আশেকান সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এ বাড়িতে প্রতিবছর তিনি আশেকানদের নিয়ে ওরস মাহফিল করে আসছেন। যার খরচ সম্পূর্ণ আমাদের পারিবারিক সদস্যরা বহন করেন। যেহেতু তিনি রোগশয্যায় যেকোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারেন। উনার মনের ইচ্ছাতেই উনি নিজের কবরটা যেন দেখে যেতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা ছেলেরা বাবার সামনে কবরটা তৈরি করছি।
ছোট ছেলে মো. শাহারাজ উদ্দিন ঘরের পাশে বাবার জন্য কবর তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর উনার ইচ্ছায় তাকে এখানে দাফন দেয়া হবে।
স্থানীয় প্রতিবেশী জাফর উদ্দিন বলেন, মৃত্যুর আগে কারো জন্য কখনও কবর বানাতে দেখিনি কিংবা শুনিনি। কিন্তু এখানে দেখলাম। নিজের জন্য নিজেই কবর তৈরি করেছেন জমিদার ডাক্তার। এতে এলাকায় কেউ ভাল বললেও অনেকেই আবার খারাপ মন্তব্য করতে দেখা যায়। তবে অদৃশ্য কোন এক ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন চৌধুরী বলেন, এ ব্যক্তি ভিন্ন তরীকার লোক, যে কারণে তিনি তার মত করে এ কবর করেছেন। ইসলামী শরিয়তে কি বলে তা আমার জানা নেই। তবে তার জীবনের শেষ ইচ্ছে মোতাবেক কবরটি করা হয়েছে।
হাজী এমরাত আলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, মৃত্যুর আগে কবরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা এবং মাটি ভরাট করা যেতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর আগে বা পরে কবর বাঁধাই করা ইসলাম সমর্থন করে না। এছাড়াও যদি কোন অসৎ বা মাজার করার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে এলাকাবাসীর উচিৎ এটি প্রতিহত করা।
এ বিষয়ে বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর আগেই জীবিত মানুষের জন্য কবর খনন করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এটা কেন করেছ। ছেলেদের উত্তর ছিল আমার বাবার একান্ত ইচ্ছা যেন উনি উনার কবরটা দেখে যেতে পারে। আমি তাদেরকে বলেছি ইসলামের বিধি বিধানের বাইরে এ সব কাজ করা যাবে না। আসলে এগুলোর কোনো বিধান নেই। এ সব গর্হিত কাজ এখনই বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।