পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে পাঁচ বছর আগে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন আলমগীর হোসেন আকন্দ (৪৮)। স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ থাকলেও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একবারের জন্যও দেশে আসা হয়নি তাঁর। পাঁচ বছর পর তিনি দেশে ফিরলেন লাশ হয়ে।
আলমগীর হোসেন আকন্দের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের খামারপাথুরিয়া গ্রামে। সংসারে স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। সন্তানদের মধ্যে হাসান আকন্দ স্নাতক ও অন্য সন্তানেরা মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করে। বাবার পাঠানো টাকায় সংসার ও পড়ালেখার খরচ চলত তাঁদের।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরদিন মালয়েশিয়ায় হিট স্ট্রোকে মারা যান আলমগীর। মালয়েশিয়ায় কর্মরত সহকর্মীদের মাধ্যমে খবরটি পেয়েছিল আলমগীরের পরিবার। লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা। মৃত্যুর ২৩ দিন পর একটি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলমগীরের স্ত্রী সামসুন্নাহার (৪২) বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার তাঁদের। সংসারে সচ্ছলতা ও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন ছেলের বাবা। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করতেন তিনি। তাঁর পাঠানো টাকায় সংসার ও পড়ালেখার খরচ চলত। তাঁর মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। এখন সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, তিনি ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ।
আলমগীরের বড় ছেলে হাসান আকন্দ বলেন, বাবা বিদেশে চলে যাওয়ার পর মুঠোফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলতেন। ভালো করে পড়ালেখা করার উপদেশ দিতেন। তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশে ফেরেননি। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আক্ষেপ ছিল। বাবা কোরবানি ঈদে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। তাঁর আগে রোজার ঈদে বাবার মৃত্যু হলো। বাবার মৃত্যুতে ছোট দুই ভাই–বোন ভেঙে পড়েছে। মা–ও শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, আলমগীরের লাশ বাড়িতে আনার পর স্ত্রী-সন্তানদের আহাজারি থামছে না। স্বজনদের সহায়তায় স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।