নিজস্ব প্রতিনিধি; বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতা প্রদান এবং ব্লকপদ বিলুপ্ত করে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে লাগাতার অন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর আদালতের কর্মচারীরা।
৫ মে সকালে লক্ষ্মীপুর জজ আদালত প্রাঙ্গনে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে দুই দফা দাবি জানিয়ে ২ ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেন তার।
এ সময় নেতৃবৃন্দরা জানান, প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও আইন সচিব মহোদয়ের নিকট বৈষম্যহীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতা প্রদান করবেন। বিদ্যমান জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করাসহ সব ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগাতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছে তারা ।
তারা বলেন শতভাগ বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান। সেখানেও সহায়ক কর্মচারীগণের বৈষম্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না থাকায়, যা বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়। এরপরও দাবি না মানলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব। এসময় কর্মবিরতিতে বক্তব্য রাখেন জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এড. ফেরদৌস আহাম্মদ মানিক, ( জিপি) এড.হারুন অর রশিদ ব্যাপারি, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. ছাইফুর রহমান,জহিরুল ইসলাম, মো: হারুন অর রশিদসহ লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের কর্মচারীরা উপস্থিত বক্তব্য রাখেন।
এ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে লিখিত এক বক্তব্যে বক্তারা বলেন বিচার বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধু বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীদের ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিচারকদের সঙ্গে আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা একই দপ্তরে কাজ করেন। তবে জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকদের বেতনভাতাদি হলেও সহায়ক কর্মচারীরা জনপ্রশাসনের আলোকে বেতনভাতাদি পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সচিবালয়ে একজন অফিস সহায়ক চাকরিতে যোগদান করে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে অফিস সহকারী পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারেন।
পুলিশের কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ শতভাগ বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান। সেখানেও সহায়ক কর্মচারীগণের বৈষম্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না থাকায় অধস্তন আদালতের প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মচারীকে আশাহত করেছে, যা বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
বক্তারা বলেন, দুই দফা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি প্রদানসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায় পর্যন্ত একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস প্রদান করা হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে দাবি উপস্থাপন করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন দাবি যৌক্তিক হিসেবে সহমত পোষণ করলেও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নিকট প্রদানকৃত কমিশন প্রতিবেদনের সুপারিশে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসাবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতাদি প্রদানের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। এ ছাড়া চাকরি ও নিয়োগ বিধিমালার যুগোপযোগী সংস্কারের উল্লেখ করা হয়নি।
দুই দফা দাবি স্পষ্ট করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের এ সভাপতি জানান, প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও আইন সচিব মহোদয়ের নিকট বৈষম্যহীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতা প্রদান করবেন। বিদ্যমান জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করাসহ সব ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগাতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।