Dhaka , বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে বিশ্বের ৪০ লাখ কন্যা শিশু

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুন ২০২০
  • ৬২ Time View

বিশ্বের ৪০ লাখ কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা মহামারি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছে দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।

সংস্থাটি বলছে, স্কুল বন্ধ থাকা, দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়াসহ করোনা সম্পর্কিত নানা কারণ বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক কন্যা শিশু।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের বাল্যবিয়ে বিশেষজ্ঞ এরিকা হল বলেন, ‘যখন সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারির মতো কোনও সংকট তৈরি হয়, তখন বাল্যবিয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। আমরা যদি এখনই এটি বন্ধের বিষয়ে ভাবতে শুরু না করি তবে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে।’

আর এজন্য তাদের সংস্থাটির স্বাস্থ্য সংকট তথা করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয় বলেও মনে করেন এরিক।

সংস্থাটি আরও মনে করছে, বিশ্বে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাছাড়া লকডাউনের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে রোধের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে সংস্থাটির জন্য।

এছাড়া এই মহামারি অল্পবয়সী মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ লাভের বিষয়টিকেও আরও কঠিন করে তুলছে। ফলে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে মেয়ে শিশুদের ওপর বিয়ের চাপও বাড়ছে।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতিবছর গোটা বিশ্বের কমপক্ষে ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশুর ১৮ বছর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এই হিসেবে প্রতি তিন সেকেন্ডের ব্যাবধানে বিয়ের পিঁড়িতে বসছে একটি মেয়ে শিশু।

এর আগে গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে আগামী এক দশকে আরও ১ কোটি ৩০ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হবে।

এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাল্য বিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে কর্মরত ১১,০০০ সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ‘গার্লস নট ব্রাইডস’র সদস্যরা।

গার্লস নট ব্রাইডসের প্রধান নির্বাহী ফেইথ মওয়াঙ্গি-পাওয়েল বলেন, ‘সামনে অনেক খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। সম্ভবত আমরা প্রচুর পরিমাণে বাল্য বিবাহ দেখতে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, অফ্রিকা ও ল্যাটিন আফি্রকার দেশগুলোতে এসব বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটবে। আর এমনটি হলে শিশুবিয়ে কমানোর জন্য আমরা গত কয়েক দশক ধরে যতটা কাজ করছে, সেটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে।’

এ সময় পাওযেল করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,‘স্কুলগুলো মেয়েদের রক্ষা করে। স্কুল বন্ধ থাকলে তাদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ শেষ হওয়ার পরেও সম্ভবত অনেক মেয়ে আর স্কুলে ফিরে যাবে না, যা খুব ভয়ঙ্কর। তাই তারা যাতে স্কুলে ফিরে যায় আমাদের বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

ওয়ার্ল্ড ভিশনের এরিক হল মনে করেন, করোনায় দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান ও ভারতে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে ওই দেশগুলোতে এমন কিছু ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেখানে এসব বিয়ে ঠেকাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

তিনি আরও আশঙ্কা করেন, লকডাউনের সুযোগ অনেক পরিবার যেমন তাদের মেয়েশিশুদের বাল্যবিয়ে দিবে, তেমনি এটি গোপন করারও সুযোগ পাবে।

একই সঙ্গে তিনি জানান, মহামারির কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে তা থেকে বাঁচার জন্যও অনেক দরিদ্র পরিবার এই বাল্যবিয়ের আশ্রয় নিবে। এর মাধ্যমে তারা পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করবে। আর এসব বাল্যবিয়ের ফলে সমাজে যৌতুক লেনদেনেরও সুযোগ তৈরি হবে।

সূত্র: রয়টার্স/টিআরটি ওয়ার্ল্ড

এমএ/

Tag :
About Author Information

করোনায় বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে বিশ্বের ৪০ লাখ কন্যা শিশু

Update Time : ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুন ২০২০

বিশ্বের ৪০ লাখ কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা মহামারি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছে দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।

সংস্থাটি বলছে, স্কুল বন্ধ থাকা, দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়াসহ করোনা সম্পর্কিত নানা কারণ বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক কন্যা শিশু।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের বাল্যবিয়ে বিশেষজ্ঞ এরিকা হল বলেন, ‘যখন সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারির মতো কোনও সংকট তৈরি হয়, তখন বাল্যবিয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। আমরা যদি এখনই এটি বন্ধের বিষয়ে ভাবতে শুরু না করি তবে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে।’

আর এজন্য তাদের সংস্থাটির স্বাস্থ্য সংকট তথা করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয় বলেও মনে করেন এরিক।

সংস্থাটি আরও মনে করছে, বিশ্বে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাছাড়া লকডাউনের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে রোধের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে সংস্থাটির জন্য।

এছাড়া এই মহামারি অল্পবয়সী মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ লাভের বিষয়টিকেও আরও কঠিন করে তুলছে। ফলে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে মেয়ে শিশুদের ওপর বিয়ের চাপও বাড়ছে।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতিবছর গোটা বিশ্বের কমপক্ষে ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশুর ১৮ বছর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এই হিসেবে প্রতি তিন সেকেন্ডের ব্যাবধানে বিয়ের পিঁড়িতে বসছে একটি মেয়ে শিশু।

এর আগে গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে আগামী এক দশকে আরও ১ কোটি ৩০ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হবে।

এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাল্য বিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে কর্মরত ১১,০০০ সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ‘গার্লস নট ব্রাইডস’র সদস্যরা।

গার্লস নট ব্রাইডসের প্রধান নির্বাহী ফেইথ মওয়াঙ্গি-পাওয়েল বলেন, ‘সামনে অনেক খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। সম্ভবত আমরা প্রচুর পরিমাণে বাল্য বিবাহ দেখতে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, অফ্রিকা ও ল্যাটিন আফি্রকার দেশগুলোতে এসব বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটবে। আর এমনটি হলে শিশুবিয়ে কমানোর জন্য আমরা গত কয়েক দশক ধরে যতটা কাজ করছে, সেটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে।’

এ সময় পাওযেল করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,‘স্কুলগুলো মেয়েদের রক্ষা করে। স্কুল বন্ধ থাকলে তাদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ শেষ হওয়ার পরেও সম্ভবত অনেক মেয়ে আর স্কুলে ফিরে যাবে না, যা খুব ভয়ঙ্কর। তাই তারা যাতে স্কুলে ফিরে যায় আমাদের বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

ওয়ার্ল্ড ভিশনের এরিক হল মনে করেন, করোনায় দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান ও ভারতে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে ওই দেশগুলোতে এমন কিছু ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেখানে এসব বিয়ে ঠেকাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

তিনি আরও আশঙ্কা করেন, লকডাউনের সুযোগ অনেক পরিবার যেমন তাদের মেয়েশিশুদের বাল্যবিয়ে দিবে, তেমনি এটি গোপন করারও সুযোগ পাবে।

একই সঙ্গে তিনি জানান, মহামারির কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে তা থেকে বাঁচার জন্যও অনেক দরিদ্র পরিবার এই বাল্যবিয়ের আশ্রয় নিবে। এর মাধ্যমে তারা পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করবে। আর এসব বাল্যবিয়ের ফলে সমাজে যৌতুক লেনদেনেরও সুযোগ তৈরি হবে।

সূত্র: রয়টার্স/টিআরটি ওয়ার্ল্ড

এমএ/