Dhaka , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কমলনগর ইউএনও’র বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন, লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা :৪ সাংবাদিক আহত লক্ষ্মীপুর জামীরতলী দারুসুন্নাহ ইসলামিায়া আলিম মাদ্রাসার পুস্কার বিতরণ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার,সভাপতি আলী, সম্পাদক ফারুক লক্ষ্মীপুরে ব্যতিক্রমী আয়োজনে সুন্নাতে খাতনা গাজী কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরিফ, সম্পাদক শিপন। কমলনগরে ইউনিয়ন কৃষক দলের কৃষক সমাবেশ রায়পুর গাজী কমপ্লেক্সে এলিগ্যান্ট এর উদ্বোধন রায়পুর গাজী শপিং কমপ্লেক্স এর ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ রায়পুরে শহীদ জিয়ার ৮৯তম জন্মদিনে কম্বল বিতরণ

৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবসে নেই কোন কর্মসূচি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৩২ Time View

বিএসম সাগর লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ (০৪ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এ দিনে জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরই মধ্য দিয়ে পাক-বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আল বদরদের হত্যা, লুট, আর নির্যাতনের হাত থেকে জেলাবাসী মুক্তি পায়।

এ দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর শহীদদের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত, র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হলেও এবার নেই কোন আয়োজন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে গেলো দিবসটি।

মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা দিবসটি পালন করতে পারিনি। দিনটি লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মরণীয়। প্রতি বছরই দিবসটি পালন করা হতো। স্বাধীনতার এতো বছর পর এ প্রথম দিবসটি পালিত হয়নি।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, দিবসটি সম্পর্কে প্রশাসন আমাদের কিছু জানান নি। তবে আজ আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে সভা করেছি। হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন হয় নি।

কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস জেলার বিভিন্নস্থানে পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙ্গালী। পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের মাদাম ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রিজের লোহার পিলারগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

যুদ্ধের দিনগুলোতে পাক-হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করতো। যুবতিদের পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। আবার অনেককেই ফেলে দিয়েছিল খরস্রোতা রহমতখালী নদীতে। নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি।

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর থেকে, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় তারা।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, দিবসটি আমাদের জন্য অত্যান্ত গৌরবের। প্রতি বছরই দিবসটি পালন হতো। কখনও ছোট পরিসরে আবার কখনও বৃহৎ পরিসরে। এবারই মনে হয় দিবসটি পালন হচ্ছে না। এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। সেদিনের উল্লাস, উচ্ছ্বাস মানুষ যদি ধারন না করে তাহলে যেকোন বিজয়কে সহজে ভুলে যাবে।

জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর কোন কর্মসূচি না রাখলেও ১৪ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা সহ কয়েকটি কর্মসূচি রেখেছে জেলা প্রশাসন। তবে তা গতবারের চেয়ে সীমিত পরিসরে বলেন জানান আয়োজন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারকে মুঠোফোন কল করে পাওয়া যায় নি।

Tag :
About Author Information

Sagor Ahmed

কমলনগর ইউএনও’র বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন,

৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবসে নেই কোন কর্মসূচি

Update Time : ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএসম সাগর লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ (০৪ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এ দিনে জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরই মধ্য দিয়ে পাক-বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আল বদরদের হত্যা, লুট, আর নির্যাতনের হাত থেকে জেলাবাসী মুক্তি পায়।

এ দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর শহীদদের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত, র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হলেও এবার নেই কোন আয়োজন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে গেলো দিবসটি।

মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা দিবসটি পালন করতে পারিনি। দিনটি লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মরণীয়। প্রতি বছরই দিবসটি পালন করা হতো। স্বাধীনতার এতো বছর পর এ প্রথম দিবসটি পালিত হয়নি।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, দিবসটি সম্পর্কে প্রশাসন আমাদের কিছু জানান নি। তবে আজ আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে সভা করেছি। হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন হয় নি।

কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস জেলার বিভিন্নস্থানে পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙ্গালী। পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের মাদাম ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রিজের লোহার পিলারগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

যুদ্ধের দিনগুলোতে পাক-হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করতো। যুবতিদের পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। আবার অনেককেই ফেলে দিয়েছিল খরস্রোতা রহমতখালী নদীতে। নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি।

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর থেকে, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় তারা।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, দিবসটি আমাদের জন্য অত্যান্ত গৌরবের। প্রতি বছরই দিবসটি পালন হতো। কখনও ছোট পরিসরে আবার কখনও বৃহৎ পরিসরে। এবারই মনে হয় দিবসটি পালন হচ্ছে না। এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। সেদিনের উল্লাস, উচ্ছ্বাস মানুষ যদি ধারন না করে তাহলে যেকোন বিজয়কে সহজে ভুলে যাবে।

জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর কোন কর্মসূচি না রাখলেও ১৪ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা সহ কয়েকটি কর্মসূচি রেখেছে জেলা প্রশাসন। তবে তা গতবারের চেয়ে সীমিত পরিসরে বলেন জানান আয়োজন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারকে মুঠোফোন কল করে পাওয়া যায় নি।