Dhaka , শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে আনন্দ টিভি থেকে বরখাস্ত হলেন ‘প্রশান্ত’ গণঅভ্যুত্থান যখন হয় এটা আইন মেনে চলে না এটা আইন ভাঙার জন্য হয়:ফরহাদ মজহার লক্ষ্মীপুরে গুলীবিদ্ধ আমিনার শয্যাপাশে জামায়াত নেতা :ড.রেজাউল লক্ষ্মীপুরে বিএনপি দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১ শহিদদের রক্তের বদলা নিতে ‘যে অঙ্গীকার’ করলেন শিবির সভাপতি আ.লীগ নিষিদ্ধে সরকার একা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না : মাহফুজ আলম বাংলাদেশেকে নিয়ে একটা গভীর চক্রান্ত চলছে: এ্যানি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রই আর টিকবে না : ফয়েজ আহম্মদ লক্ষ্মীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিশু গুলিবিদ্ধ চুরির অপবাদে শ্রমিকদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র ১০ নম্বার সংকেত জেনেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি চর আবদুল্লাহর বাসিন্দারা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩
  • ৮৪ Time View

হ্যাপী টাইমস প্রতিবেদক: রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লাাহ। যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় এ দ্বীপের বাসিন্দারা চরম ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু তারপরও দ্বীপ ছেড়ে সমতলে কোনো সাইক্লোন শেল্টারে যেতে চান না তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চলমান ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ সংকেত পেয়েছেন আরও আগে। অর্থাৎ, মোখা আঘাত হানার আরও কয়েকদিন আগে থেকে তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিল উপজেলা প্রশাসন। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রলারও পাঠানো হয় তাদের কাছে। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি লোকজন। চরের বেশিরভাগ মানুষ গবাদিপশু পালন করেন। মূলত সেগুলোর মায়ায় তারা চরেই থেকে যান। চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর  বলেন, চরে এখন প্রায় ৫ হাজার লোকের বসবাস। বাসিন্দারা দুর্যোগের সময় ঘরবাড়ি-গবাদিপশু চরে রেখে কোথাও যেতে চায় না। ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ সংকেত পেয়ে মাত্র ১৫০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। চরের বাসিন্দারা যেহেতু সমতলে আসতে অনীহা করেন, তাদের সুবিধার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তনু চৌধুরী। তিনি বলেন, চরের মধ্যেই সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চর আবদুল্লাহতে বসতি শুরু হয়েছে আশির দশকের পর থেকে। সেখানে ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ছিল। কিন্তু এখন কমতে শুরু করেছে। কারণ হিসেবে বাসিন্দা বলছে, অনিরাপদ বাসস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যারা দুর্যোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারছেন, বা যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তারাই চরের স্থায়ী বাসিন্দা। সেখানে এখন তাদের কিছু সম্পদ-সম্পত্তি হয়েছে, সেগুলোর মায়ায় তারা দুর্যোগের সময় সমতলে আসতে চান না। সমতল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে চর আবদুল্লাহর অবস্থান। এটি রামগতির একটি ইউনিয়ন। দ্বীপের দক্ষিণেই বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। ফলে সমুদ্র থেকে আসা যেকোনো দুর্যোগের কবলে পড়তে হয় চরের বাসিন্দাদের। আবার চরটির চারপাশ অরক্ষিত। ফলে নদীর অতিরিক্ত জোয়ারে ডুবে যায় চর আবদুল্লাহ। ক্ষতি হয় ফসল ও গবাদি পশুর।

দুর্যোগে চরের বাসিন্দারা যেমন অনিরাপদ, তেমনি তাদের সহায় সম্বলও। দুর্যোগ কখনো ফসল কেড়ে নেয়, আবার কখনো ভাসিয়ে নেয় গবাদি পশু। কোনো কোনো সময় আবার মাথার ওপর থাকা আশ্রয়টুকুও উড়িয়ে নেয় ঝড়ো বাতাস। এসবের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার এ চরে এখন বসবাস করেন হাজার পাঁচেক মানুষ।

চরের বাসিন্দারা জানান, ৯০ দশকের শুরুর দিকে চরের বাসিন্দাদের জন্য আজাদনগর এলাকায় একটি আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু কেল্লা নির্মাণ হয়। গত ১৫ বছর আগে সেটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। চরের কয়কেটি স্থানে উঁচু টিলা ছিল। এখনও সেগুলোও নদীগর্ভে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরের বাসিন্দাদের প্রাণের বড় কোনো ক্ষতি না হলেও তাদের ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন নামে চরের এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো সংকেত দেখা দিলে উপজেলার রামগতির আলেকজান্ডার থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ট্রলার পাঠানো হয় যাতে বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশরাই চরে থাকা সহায় সম্বল, ক্ষেতের ফসল কিংবা গবাদি পশু রেখে সমতলে আশ্রয়ে যেতে চান না। নদীর জোয়ারের পানি বা দুর্যোগের সাথে এখানকার লোকজনের বেড়ে ওঠা। তাই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত জোয়ারের পানির ঝুঁকি থাকলেও কোনো কিছুকেই আমরা পরোয়া করি না। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা চরেই থাকি। আর দুর্যোগের সময় মেঘনা উত্তাল থাকলে নদী পাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়াটাকেও আমরা অনিরাপদ মনে করি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে চরে ফসল ও গবাদি পশু হারিয়েছেন এমন কয়েকজনের একজন মো. রাশেদ। তিনি জানান, বলেন, সর্বশেষ গত তিন বছর আগে চরে সর্বোচ্চ উচ্চতায় জোয়ারের পানি ওঠে। জোয়ারের পানিতে তার চারটি গরুভেসে গেছে। এছাড়া জোয়ারের নোনা পানি নেমে চরের ঘাসগুলো বিষাক্ত হয়ে যায়। একই বছর বিষাক্ত ঘাস খেয়ে তার ৮টি ছাগল মারা গেছে।  ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে চরম ক্ষতির শিকার হন বেশ কয়েকজন ভেড়া খামারি। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ৮ থেকে ১০ জন খামারির প্রায় সাড়ে তিনশর বেশি ভেড়া নদীতে ভেসে গেছে। ঝড়ে অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর পড়ে যায়। তখন অন্তত ১০ ব্যক্তি আহত হন। ঘর চাপা পড়ে মারা যায় একটি গরু। একই বছরের মার্চে ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়। চরের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, সাগরে সংকেত দেখা দিলে আমরা চর ছেড়ে চলে গেলে হয়তো নিরাপদে থাকবো। কিন্তু আমাদের সহায়-সম্বল সবকিছু তো চরে অনিরাপদে থাকছে। এ কারণের আমরা চর চাড়তে পারি না।

চরের এক সময়ের স্কুল শিক্ষক ও ইউনিয়ন রেডক্রসের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেখা দিলে আমরা পুরো চরে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করি। তারা যেন তাদের গবাদিপশু নিয়ে বাড়িতেই থাকে। তবে সাইক্লোন শেল্টার বা উঁচু কেল্লা না থাকায় চরের মানুষ তাদের জানমাল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। উত্তাল নদী পাড়ি দিয়ে মূল ভূখন্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। তাই এ চরেই একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, চরের বাসিন্দারা তাদের গবাদিপশু-ঘরবাড়ি নিয়ে চিন্তিত থাকায় আপাতত দুটি উঁচু কেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে দুর্যোগের সময়ে বাসিন্দারা গবাদিপশু নিয়ে কেল্লায় আশ্রয় নিতে পারে।

রামগতি ইউএনও এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, চরে দুটি গুচ্ছ গ্রাাম ও ৫০ টি আশ্রয়ণের ঘর রয়েছে। ৮ মিটারের নিচে পানি হলে চরের বাসিন্দারা সেখানে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। তবে এর বেশি পানি উঠলে পুরোপুরি ঝুঁকিতে থাকবেন তারা। সে কথা চিন্তা করে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব করেছি। কিন্তু চরের মাটি পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছি। তারপরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা যায়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।

Tag :
About Author Information

Happy Times

আলোচিত

অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে আনন্দ টিভি থেকে বরখাস্ত হলেন ‘প্রশান্ত’

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র ১০ নম্বার সংকেত জেনেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি চর আবদুল্লাহর বাসিন্দারা

Update Time : ০৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩

হ্যাপী টাইমস প্রতিবেদক: রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লাাহ। যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় এ দ্বীপের বাসিন্দারা চরম ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু তারপরও দ্বীপ ছেড়ে সমতলে কোনো সাইক্লোন শেল্টারে যেতে চান না তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চলমান ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ সংকেত পেয়েছেন আরও আগে। অর্থাৎ, মোখা আঘাত হানার আরও কয়েকদিন আগে থেকে তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিল উপজেলা প্রশাসন। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রলারও পাঠানো হয় তাদের কাছে। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি লোকজন। চরের বেশিরভাগ মানুষ গবাদিপশু পালন করেন। মূলত সেগুলোর মায়ায় তারা চরেই থেকে যান। চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর  বলেন, চরে এখন প্রায় ৫ হাজার লোকের বসবাস। বাসিন্দারা দুর্যোগের সময় ঘরবাড়ি-গবাদিপশু চরে রেখে কোথাও যেতে চায় না। ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ সংকেত পেয়ে মাত্র ১৫০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। চরের বাসিন্দারা যেহেতু সমতলে আসতে অনীহা করেন, তাদের সুবিধার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তনু চৌধুরী। তিনি বলেন, চরের মধ্যেই সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চর আবদুল্লাহতে বসতি শুরু হয়েছে আশির দশকের পর থেকে। সেখানে ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ছিল। কিন্তু এখন কমতে শুরু করেছে। কারণ হিসেবে বাসিন্দা বলছে, অনিরাপদ বাসস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যারা দুর্যোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারছেন, বা যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তারাই চরের স্থায়ী বাসিন্দা। সেখানে এখন তাদের কিছু সম্পদ-সম্পত্তি হয়েছে, সেগুলোর মায়ায় তারা দুর্যোগের সময় সমতলে আসতে চান না। সমতল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে চর আবদুল্লাহর অবস্থান। এটি রামগতির একটি ইউনিয়ন। দ্বীপের দক্ষিণেই বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। ফলে সমুদ্র থেকে আসা যেকোনো দুর্যোগের কবলে পড়তে হয় চরের বাসিন্দাদের। আবার চরটির চারপাশ অরক্ষিত। ফলে নদীর অতিরিক্ত জোয়ারে ডুবে যায় চর আবদুল্লাহ। ক্ষতি হয় ফসল ও গবাদি পশুর।

দুর্যোগে চরের বাসিন্দারা যেমন অনিরাপদ, তেমনি তাদের সহায় সম্বলও। দুর্যোগ কখনো ফসল কেড়ে নেয়, আবার কখনো ভাসিয়ে নেয় গবাদি পশু। কোনো কোনো সময় আবার মাথার ওপর থাকা আশ্রয়টুকুও উড়িয়ে নেয় ঝড়ো বাতাস। এসবের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার এ চরে এখন বসবাস করেন হাজার পাঁচেক মানুষ।

চরের বাসিন্দারা জানান, ৯০ দশকের শুরুর দিকে চরের বাসিন্দাদের জন্য আজাদনগর এলাকায় একটি আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু কেল্লা নির্মাণ হয়। গত ১৫ বছর আগে সেটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। চরের কয়কেটি স্থানে উঁচু টিলা ছিল। এখনও সেগুলোও নদীগর্ভে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরের বাসিন্দাদের প্রাণের বড় কোনো ক্ষতি না হলেও তাদের ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন নামে চরের এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো সংকেত দেখা দিলে উপজেলার রামগতির আলেকজান্ডার থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ট্রলার পাঠানো হয় যাতে বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশরাই চরে থাকা সহায় সম্বল, ক্ষেতের ফসল কিংবা গবাদি পশু রেখে সমতলে আশ্রয়ে যেতে চান না। নদীর জোয়ারের পানি বা দুর্যোগের সাথে এখানকার লোকজনের বেড়ে ওঠা। তাই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত জোয়ারের পানির ঝুঁকি থাকলেও কোনো কিছুকেই আমরা পরোয়া করি না। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা চরেই থাকি। আর দুর্যোগের সময় মেঘনা উত্তাল থাকলে নদী পাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়াটাকেও আমরা অনিরাপদ মনে করি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে চরে ফসল ও গবাদি পশু হারিয়েছেন এমন কয়েকজনের একজন মো. রাশেদ। তিনি জানান, বলেন, সর্বশেষ গত তিন বছর আগে চরে সর্বোচ্চ উচ্চতায় জোয়ারের পানি ওঠে। জোয়ারের পানিতে তার চারটি গরুভেসে গেছে। এছাড়া জোয়ারের নোনা পানি নেমে চরের ঘাসগুলো বিষাক্ত হয়ে যায়। একই বছর বিষাক্ত ঘাস খেয়ে তার ৮টি ছাগল মারা গেছে।  ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে চরম ক্ষতির শিকার হন বেশ কয়েকজন ভেড়া খামারি। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ৮ থেকে ১০ জন খামারির প্রায় সাড়ে তিনশর বেশি ভেড়া নদীতে ভেসে গেছে। ঝড়ে অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর পড়ে যায়। তখন অন্তত ১০ ব্যক্তি আহত হন। ঘর চাপা পড়ে মারা যায় একটি গরু। একই বছরের মার্চে ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়। চরের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, সাগরে সংকেত দেখা দিলে আমরা চর ছেড়ে চলে গেলে হয়তো নিরাপদে থাকবো। কিন্তু আমাদের সহায়-সম্বল সবকিছু তো চরে অনিরাপদে থাকছে। এ কারণের আমরা চর চাড়তে পারি না।

চরের এক সময়ের স্কুল শিক্ষক ও ইউনিয়ন রেডক্রসের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেখা দিলে আমরা পুরো চরে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করি। তারা যেন তাদের গবাদিপশু নিয়ে বাড়িতেই থাকে। তবে সাইক্লোন শেল্টার বা উঁচু কেল্লা না থাকায় চরের মানুষ তাদের জানমাল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। উত্তাল নদী পাড়ি দিয়ে মূল ভূখন্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। তাই এ চরেই একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, চরের বাসিন্দারা তাদের গবাদিপশু-ঘরবাড়ি নিয়ে চিন্তিত থাকায় আপাতত দুটি উঁচু কেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে দুর্যোগের সময়ে বাসিন্দারা গবাদিপশু নিয়ে কেল্লায় আশ্রয় নিতে পারে।

রামগতি ইউএনও এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, চরে দুটি গুচ্ছ গ্রাাম ও ৫০ টি আশ্রয়ণের ঘর রয়েছে। ৮ মিটারের নিচে পানি হলে চরের বাসিন্দারা সেখানে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। তবে এর বেশি পানি উঠলে পুরোপুরি ঝুঁকিতে থাকবেন তারা। সে কথা চিন্তা করে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব করেছি। কিন্তু চরের মাটি পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছি। তারপরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা যায়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।